সোনালি আপু - রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প


গল্পঃ সোনালি আপু

সরকারি তিতুমীর কলেজে অনার্সে ভর্তি হলাম। ঢাকায় থাকতে হবে। ১০ দিন ধরে বাসা খুঁজছি। ব্যাচেলর থাকার অপরাধে ভাড়া দিতে চায় না কোনো বাড়িওয়ালা। একদিন দেখি রাস্তা সংলগ্ন বিদ্যুতের খুঁটিতে লিফলেট টানানো। একজন হিন্দু ছাত্র রুমমেট আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৯১১...। কল দিয়ে ঠিকানা জেনে বাসায় গেলাম। নমস্কার। আমি আশিষ কুমার দেবনাথ। কথা পাকাপাকি হলো। রুম ভাড়া এক হাজার ৫০০ টাকা। রাজি হলাম। এক তারিখে বাসায় উঠলাম। সপ্তাহ খানেক গুটিশুটি মেরে কাটিয়ে দিই। আমি যে মুসলমান তা জেনে যাওয়ার ভয়ে আছি।
নাহ্, এভাবে চলবে না। সবার সঙ্গে মিশতে হবে। কারও বাজার করে দিই। কারও বাবুকে নিয়ে খেলা করি। কারও ছোটখাটো সমস্যায় এগিয়ে যাই। যদিও বাস্তবে এতটা ভালো নই। সরল আর বোকাদের ভুল নাকি সবাই মেনে নেয়। তাই সরল আর বোকা সাজলাম। দুই মাসে সবার সঙ্গে মিশে গেলাম। মাসি, পিসি, ঠাকুমা সবার সঙ্গে মিশলাম। সবচেয়ে বেশি মিশেছি সোনালি আপুর সঙ্গে। বাসার মালিকের বড় মেয়ে। মাস্টার্স পাস, সুশিক্ষিতা নারী সোনালি আপু। চমৎকার নৃত্য পারেন তিনি। আমি নৃত্যপাগল। আপুকে গল্পে, গানে, আড্ডায় খুশি রাখি। আপুর আদেশ যত কঠিনই হোক না কেন তা পালন করি। যেন খুশি হয়ে আমাকে নৃত্য দেখান। আপুর মাঝে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। ফলে বিউটি পার্লারে, পার্কে, কেএফসিতে, শপিং মলে সর্বত্র আমাকে সঙ্গে নিয়ে যান। আমার সব রকম খোঁজ-খবর রাখেন। কখনও জানালা দিয়ে মজাদার খাবার রেখে যান। সন্ধ্যায় বা রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ছাদে গিয়ে গলা ছেড়ে দু'জনে গান গাই। গান শুনে আপু অবাক হন। অবাক হয়ে আমাকে এমন কিছু বলেন, যা শুনে আমি অবাক হই। ছয় মাস পার হলো। এরই মধ্যে সবাই জেনে যায় যে আপুর চেয়ে জুনিয়র, বোকাসোকা সরল এই আমি আপুর স্নেহের কাঙ্গাল। কিন্তু ইদানীং আপুর চলন-বলন পাল্টে গেছে, যা হওয়ার নয় তা বারবার ইঙ্গিত করছে। প্রথমত আমি মুসলমান, দ্বিতীয়ত আমি জুনিয়র। তাই ভয়ে আর লজ্জায় গলা শুকিয়ে যায় আমার। একদিন সকালে গৌরী শংকর কাকাকে (বাসার মালিক) বুঝিয়ে বাসা ছেড়ে দিলাম। আপু বারবার কল দেয়। রিসিভ করি না। কিন্তু আপুকে ভুলতেও পারছি না। আমার বুকের ভেতরটা হু হু করে কাঁদে প্রায়ই। আপুর আদর, স্নেহ, ভালোবাসার স্মৃতি বারবার মনে পড়ে। বাধ্য হয়ে সিমটা অফ করে দিই। কিন্তু সোনালি আপুকে কীভাবে ভুলি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ