প্রণয়াসক্ত প্রভাত - বই রিভিউ




মূলভাব: লেখিকার প্রথম বই হলেও লেখক বইটিতে নিজের দক্ষ হাতের নৈপুণ্যতা খুবই পারদর্শীভাবে উপস্থাপন করেছেন। বইয়ের মাঝে যেই গল্পটি আছে, তা একজন পাঠককে চমক দিতে, রোমাঞ্চকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করাতে প্রস্তুত। পাশাপাশি পাঠককে হাসি-কান্না অনুভূতি অনুভব করার মতো স্ট্রাকচারে গল্পটি সাজানো হয়েছে। গল্পটি শুরু থেকে শেষ অবধি আপনাকে ধরে রাখার সক্ষমতা রয়েছে। কিছু স্থানে যদি কোনো কারণে বিরক্তি ধরেও, তবুও তা আবহমান গতিতে সামনে নিয়ে যাবার মতো ধারা লেখায় বিদ্যমান। এক কথায় বলতে গেলে, একটা সামাজিক জীবন-যাপনের মাঝে ইসলামিক দিকনির্দেশনা মেনে চলার একটি গল্প। যা পাঠককে পরিতৃপ্তি দিতে সক্ষম। একজন পাঠক হিসেবে বইটি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, গল্পটা একটা বাস্তব জীবনে কিছু এলোমেলো চিত্রকে একত্রিত করে গঠন করা হয়েছে। কিছু মুহূর্তে খুশি, কিছু মুহূর্তে আফসোস আবার কিছু মুহূর্তে ক্রন্দন! যেন সবকিছু মিলে এক অসম্ভব সুন্দর কাহিনির জন্ম দিয়েছেন লেখক।

প্রচ্ছদ: বইয়ের প্রচ্ছদটি খুবই ইউনিক! বইয়ের গল্পের এক ছটাক অংশ যেন প্রচ্ছদে তুলে দেওয়া হয়েছে। গল্পের কেন্দ্রীয় দুই চরিত্রের ভাস্কর্য তুলে ধরা হয়েছে প্রচ্ছদে। তাছাড়া বইয়ের নামটিও অনেকটা ইউনিক! নামটি ভাঙালে পাওয়া যায়, ভালোবাসার সকাল। যা ইঙ্গিত করে একটি কালো রাত কিংবা অতীত ফেলে নতুন অথবা ভোরের উদয়। যা সম্পূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে আবর্তিত। বইয়ের গল্প অনুযায়ী একজন পাঠক হিসেবে প্রচ্ছদ এবং নামকে যথেষ্ট যথোপযুক্ত মনে হয়েছে।

উৎসর্গ: আমার নিজের একটা আকর্ষণীয় স্থান আছে। তা হলো, একটা বইয়ের উৎসর্গ। একজন লেখক তার বইটি কাকে উৎসর্গ করছেন এবং তা কত সুন্দরভাবে করছেন তা আমার কাছে ভীষণ আকর্ষণ করে। এই বইটির ক্ষেত্রেও কিছুটা তেমনই। লেখককের উৎসর্গ তার হেয় করা মানুষদের এবং ভালোবাসার মানুষদের প্রতি। একজন লেখক হতে হলে বহু জিনিসের উপর চড়াই-উতরাই পার করে আসতে হয়। তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো হেয় কিংবা কটুবাক্য। একজন লেখক হতে হলে তার আশেপাশের মানুষদের থেকে হেয়-কটুবাক্য না শুনে বোধ হয় লেখক হওয়া যায় না। এই হেয় অথবা কটুবাক্য শুনে অনেক লেখক ঝড়ে পড়ে। আবার অনেকে নতুন করে আঁকড়ে ধরার মতো শিকড় পায়। এই বইটির লেখকও আঁকড়ে ধরার শিকর পেয়েছেন। যার দরুন আমাদেরকে এত সুন্দর একটি বই উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন।

চরিত্র: গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে আমার যার যার স্থানে যথাযথ মনে হয়েছে। তবে দুই একটা চরিত্র দুই-এক স্থানে মাত্রাতিরিক্ত উপস্থাপন ছিল। কিন্তু তাও গল্পের প্রেক্ষাপটে মানিয়ে নেওয়া বা উপযুক্ত ছিল। গল্পের প্রতিটি চরিত্রই নিজ নিজ অবস্থানে চিরঞ্জীবী ছিল। পাশাপাশি চরিত্রগুলো শক্তিশালী গঠনে গঠন করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ গল্প জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এবং পাঠকদেরকে পড়ার মাঝে পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে সাহায্য করেছে। 

কাহিনি: গল্পের কাহিনিটা শুরু হয়েছিল একটা রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা মেয়েদের দিয়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই চরিত্রগুলোর সাথে আরও চরিত্র যোগ দেয়। প্রবাহমান হতে থাকে গল্পের ঘটনা। এই প্রবাহমান ঘটনার মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় প্রত্যেকটি মানুষের আবহমান জীবন-যাপনের অংশ। কিছু মানুষের জীবনের অংশ এই গল্পে একাধিক স্থানে খুঁজে পাওয়া যাবে। যা একটি সার্থক বইয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। প্রবাহমান কাহিনির মাঝে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, জীবনের চড়াই-উতরাই ইত্যাদি সবটাই খুঁজে পাওয়া যায়। লেখকের লেখা গল্পটি বই আকৃতিতে একটি সুন্দর ঘটনার জন্ম দিয়েছে। যা পাঠক পড়ে পরিতৃপ্তি পেতে সক্ষম।

শিক্ষা: সামাজিকের মাঝে বিদ্যমান ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা প্রত্যেকটা মানুষের শিক্ষা হিসেবে নেওয়া যায়। গল্পটি থেকে বেশ কয়েকটি শিক্ষা নেওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষা হলো,

 * মাত্রাতিরিক্ত শাসন কিংবা অতিরিক্ত চাপ কোনো ক্রমেই ভালো ফলাফল বহন করে না। তাছাড়া মাত্রার অতিরিক্ত হয়ে গেলেই হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা থাকে।

* আমরা হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে সুখ খোঁজ করার চেষ্টা করি। ভাবি, হারাম সম্পর্ক থেকে পবিত্র সম্পর্কে চলে গেলেই হয়। কিন্তু যা হারাম তা হারামই। গল্পের একটি স্থানে তা ভালো করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল লেখকের।

* কোনো মানুষকে আল্লাহ্ কখন, কীভাবে অথবা কার মাধ্যমে হিদায়েত প্রদান করবেন, তা আল্লাহ্ই ভালো জানেন। তাই তার প্রতি সর্বদা শুকরিয়া গোজার করা উচিত। 

অনুভূতি: গল্পটি পড়তে পড়তে আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। অনুভূতি আরও প্রগাঢ় হতে থাকে। গল্পের মধ্য দিকে কিছু চরিত্রের উপর রাগ-ক্ষোভও তৈরি হয়েছিল। অনেকটা মনে হয়েছিল, আমিই এই গল্পের একটা কেন্দ্রীয় চরিত্র। আর আমাকে ঘিরেই হচ্ছে সবকিছু। গল্পের শেষ দিকে এসে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাই। গল্পের ভেতরে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে, গল্পটা যে কয়বার পড়া হয়েছে, সে কয়বারই আমার চোখ থেকে অশ্রুপাত হয়েছে। আর তা যেন আমার অজান্তেই। তবে হারানো কিংবা পাওয়ার ভাঙা-গড়ার খেলার মধ্য দিয়ে গল্পটি শেষ হয়। শেষ দিকে হারানোর ব্যথিত মন নিয়ে হলেও একটি প্রণয়যুক্ত প্রভাতের দেখা মেলে।

মতামত: একজন পাঠক হিসেবে বইটির ব্যাপারে মতামত অবশ্যই দেওয়া উচিত। আমার মতে প্রত্যেকটা সামাজিক গল্প বা বই পড়ুয়া পাঠকদের এই বইটি অবশ্যই পড়া উচিত। এমনকি অন্যান্য জনরার পাঠকদেরকেও বইটি পড়ে দেখার আহ্বান রইল। ভালো কিছু অনুভূতির সম্মুখীন হতে পারবেন। 

বইয়ের কোয়ালিটি: বইয়ের কোয়ালিটি সম্পর্কে বলাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ দিক। বইটি অফ হোয়াইট পেপারে ছিল। সা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। প্রতিটি পৃষ্ঠা উলটানোর সময় প্রকাশনীর প্রডাকশনের প্রতি গর্ববোধ করতে বাধ্য হয়েছি। পৃষ্ঠাগুলো সত্যিই অনেক উন্নতমানের ছিল। 

সংগ্রহ: বইটির প্রথম মুদ্রণ একেবারে শেষের পথে। সংগ্রহ করতে হলে সরাসরি প্রকাশনীর অফিসিয়াল পেইজে যোগাযোগ করলেই হবে। অথবা আপনার প্রিয় বুকশপগুলোতেও পাবেন। পাশাপাশি কেউ যদি সরাসরি বাংলাবাজার থেকে বই সংগ্রহ করতে চায়, তবে ' পুঁথি পুরাণ ' থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। 

সমালোচনা: একটি বইয়ের সমালোচনা করার ভুল-ত্রুটি প্রয়োজন পড়ে। গল্পে আমি স্বল্প কয়েকটা বানান ভুল ব্যতীত তেমন কোনো ভুলই দেখতে পাইনি। যা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।  তাছাড়া গল্পের মাঝেও তেমন কোনো অসংগতি আমার নজরে আসেনি। যা একটি বইয়ের গুণগতমান উন্নত বলা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ